Header Ads Widget

লাল কয়েনের দাম লাখ টাকার? ১৯৯৬ সালের ১ টাকার লাল কয়েন কেন এত দামী ?


 

 ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে হঠাৎ করেই সারা দেশে শুরু হয় এক অদ্ভুত উন্মাদনা—

বাংলাদেশের এক টাকার লালচে বা সোনালি কয়েন নাকি লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে!
এই খবরে মুহূর্তেই তোলপাড় শুরু হয় সর্বত্র।

অজানা এক সূত্র থেকে ছড়িয়ে পড়া গুজবে মানুষ বিশ্বাস করে হুমড়ি খেয়ে পড়ে এক টাকার কয়েন কিনতে।
দোকান, বাজার, অফিস এমনকি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও লাল কয়েন সংগ্রহে নামে।
কেউ ৫০ টাকা, কেউ ২০০ টাকায় কিনতে শুরু করে এই কয়েন।

স্থানীয় দোকানগুলোতে দেখা দেয় এক টাকার কয়েনের তীব্র সংকট।
বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা ও মাজারের দানবাক্স খুলে পর্যন্ত খোঁজা হয় লাল কয়েন।
মাটির ব্যাংক ভেঙে শিশুরাও খুঁজতে থাকে—‘আমার ব্যাংকে লাল কয়েন আছে কি না!’

রিকশাচালকরা ভাড়ার বদলে কয়েন চান, দোকানিরা খুচরার পরিবর্তে কয়েন দাবি করেন।
দেশজুড়ে এক টাকার লাল কয়েন নিয়ে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা।
প্রশাসনও তখন হতবাক—কে বা কারা এই গুজব ছড়িয়েছে, জানা যায়নি।

⚠️ পুরো ঘটনাই ছিল গুজব

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাস্তবতা পরিষ্কার হয়ে যায়।
যারা লাল কয়েন উচ্চমূল্যে কিনে রেখেছিলেন, তারা কেউই পরে তা বিক্রি করতে পারেননি।
কোনো ব্যাংক, স্বর্ণকার বা বিদেশি সংস্থাও এ কয়েন কিনতে আগ্রহ দেখায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক পরে এক বিবৃতিতে জানায়—

“এক টাকার লাল কয়েনের কোনো বিশেষ দাম নেই।
এর প্রকৃত মূল্য কয়েনে লেখা এক টাকাই।”

গুজবে বলা হয়েছিল, এই কয়েন দিয়ে স্বর্ণে ভেজাল দেওয়া হয়।
তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অবৈজ্ঞানিক

🪙 এক টাকার কয়েনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বাংলাদেশে এক টাকার কয়েন প্রথম চালু হয় ১৯৭৩ সালে, অ্যালুমিনিয়াম ধাতু দিয়ে তৈরি।

পরবর্তীতে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮০ সালের মধ্যে কয়েনের ধাতু পরিবর্তিত হয়ে ব্রোঞ্জ-অ্যালুমিনিয়াম হয়।

এরপর নানা সময় কয়েনের ধাতু, রঙ ও ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হয়।
২০০০ সালের পর আধুনিক কয়েন তৈরি হয় স্টেইনলেস স্টিল বা পিতল দিয়ে।

দীর্ঘ ব্যবহারে এসব কয়েনের রঙ পরিবর্তন হয়ে অনেক সময় লালচে বা সোনালি আভা ধারণ করে,
যা থেকেই ‘লাল কয়েন’ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।

✅ আজকের বাস্তবতা

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন—
“এক টাকার লাল কয়েনের লাখ টাকার দাম”—এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও গুজব।

এখনও অনেক মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরনো সেই গল্প বিশ্বাস করে প্রতারিত হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এ ধরনের ভুয়া প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হয়ে
সরকারি তথ্য ও ব্যাংক সূত্রের ওপর নির্ভর করা উচিত। 

সংক্ষেপে:
🔹 লাল কয়েনের কোনো অতিরিক্ত মূল্য নেই।
🔹 গুজবটি ২০১০ সালে ছড়িয়ে পড়েছিল।
🔹 বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট করেছে—মূল্য এক টাকাই।
🔹 এ ঘটনায় বহু মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ