দীর্ঘ সাত বছরের বিরতি শেষে আবারও বাজারে ফিরছে বাংলাদেশের প্রথম মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেল (Pacific Bangladesh Telecom Limited - PBTL) । রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার অভিযোগের পর, কোম্পানিটি সম্প্রতি লাইসেন্স ও তরঙ্গ বরাদ্দ ফেরত পেয়েছে। আগামী মাস থেকেই তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার প্রস্তুতি চলছে।
আধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন পরিকল্পনা
নতুন করে যাত্রা শুরু করতে সিটিসেল এবার নিয়ে আসছে জিএসএমএ (GSMA) প্রযুক্তি। এর ফলে যেকোনো মোবাইল বা স্মার্টফোনে সিটিসেলের সিম ব্যবহার করা যাবে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তারা সর্বনিম্ন কল রেট ও মেয়াদবিহীন ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করবে, যা গ্রাহকদের জন্য হবে তুলনামূলক সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য।
বন্ধের পেছনের রাজনৈতিক বিতর্ক
সিটিসেল কর্তৃপক্ষের দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে ২০১৬ সালে তাদের কার্যক্রম জোরপূর্বক বন্ধ করা হয়েছিল। কোম্পানির মালিকানায় বিএনপির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ খান পরিবারের সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণেই তারা বঞ্চিত হন বলে অভিযোগ করা হয়।
কোম্পানির অভিযোগ অনুযায়ী, পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব ও অসৎ উদ্দেশ্যে নেটওয়ার্ক বন্ধ করা হয়েছিল। আদালতের নির্দেশে বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নিলেও, মালিকানার রাজনৈতিক ভিন্নমতের অজুহাতে বিটিআরসি তরঙ্গ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয়।
অন্যদিকে বিটিআরসি জানায়, বিশাল অঙ্কের বকেয়া—৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা—পরিশোধ না করায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছিল।
পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে সিটিসেল ২৪৪ কোটি টাকা পরিশোধ করে। তদন্তে জানা যায়, কোম্পানিকে ১০ মেগাহার্জ তরঙ্গ দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছিল মাত্র ৮.৮২ মেগাহার্জ। এর ফলে সরকারের প্রাপ্য বকেয়া দাঁড়ায় প্রায় ১২৮ কোটি টাকা।
৫জি প্রযুক্তি নিয়ে নতুন প্রত্যাবর্তন
সিটিসেল পূর্বে সিডিএমএ (CDMA) প্রযুক্তিতে সেবা দিত। এখন তারা ৪জি ও ৫জি যুগে প্রবেশ করছে।
নিশাদ আলী খান, পিবিটিএল-এর হেড অব রেগুলেটরি ও কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, বলেন—
“আমাদের নেটওয়ার্ক রাজনৈতিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন আমরা নতুন প্রযুক্তি ও গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা নিয়ে ফিরছি। স্বল্প লাভে গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
কর্মসংস্থান ও বাজারের প্রত্যাশা
হঠাৎ নেটওয়ার্ক বন্ধের কারণে প্রায় এক হাজার কর্মচারী চাকরি হারান এবং বিক্রেতা ও পার্টনারসহ প্রায় দুই লাখ মানুষ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন।
ফেরার ঘোষণার পর সামাজিক মাধ্যমে উচ্ছ্বাস দেখা গেলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন
অবকাঠামো গড়ে তুলতে সিটিসেলকে বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন,
“দেশীয় মালিকানার এই অপারেটর ফিরলে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়বে। তবে টিকে থাকতে হলে তাদের নতুন অবকাঠামো ও সেবা মানে ব্যাপক উন্নয়ন আনতে হবে।”
সিটিসেলের ঐতিহাসিক ভূমিকা
১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সিটিসেল ১৯৯৩ সালে প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (PBTL) নামে ব্র্যান্ডিং শুরু করে। দেশের মানুষকে প্রথম মোবাইল ফোন সেবা দেওয়ার গৌরব এই প্রতিষ্ঠানেরই।
0 মন্তব্যসমূহ